ভারতীয় পার্লামেন্টে আইন পাসের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো ।

0

4. ভারতীয় পার্লামেন্টে আইন পাসের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো ।

Ans. আইনসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আইন প্রণয়ন । সংবিধানের 107 থেকে 122 নং ধারায় ভারতের পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন পদ্ধতির উল্লেখ আছে । লোকসভা ও রাজ্যসভা যে - কোনো কক্ষে বিল উত্থাপন করা যায় । বেসরকারি বিল উত্থাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কক্ষে অনুমতি নিতে হয় । সরকারি বিল উত্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্যাবিনেট । কোনো বিল আইনে পরিণত হতে হলে নিম্নোক্ত পর্যায় অতিক্রম করতে হয় —

প্রথম পর্যায় :–  বিল পাসের প্রথম পর্যায় হল বিল উত্থাপন ও বিলের প্রথম পাঠ । লোকসভার স্পিকার এবং রাজ্যসভার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের অনুমতি সাপেক্ষে উত্থাপক সংশ্লিষ্ট কক্ষে বিলটি উত্থাপন করেন । এই পর্যায়ে বিলের শিরোনাম পাঠ করা হয় এবং প্রয়োজনে বিলটির উদ্দেশ্য ও নীতি সম্পর্কে উত্থাপক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ।

 দ্বিতীয় পর্যায় :–   বিল উত্থাপনের কিছুদিনের মধ্যে বিলের দ্বিতীয় পাঠ শুরু হয় । এই পর্যায়ে বিলের উত্থাপক নিম্নলিখিত যে - কোনো একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারেন – (i) বিলটি কক্ষ বিবেচনার জন্য গ্রহণ করুক । (ii) বিলটি পার্লামেন্টের সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক । (iii) বিলটি উভয় কক্ষের যুক্ত কমিটিতে পাঠানো হোক । (iv) বিলটি সম্পর্কে জনমত গ্রহণের জন্য প্রচার করা হোক ।

 তৃতীয় পর্যায় :–   এই পর্যায় হল কমিটি পর্যায় । বিলটি সিলেক্ট কমিটি বা যুক্ত কমিটির কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সংশ্লিষ্ট কমিটি প্রথমে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিলটির প্রতিটি ধারা বিশ্লেষণ করে । এই পর্যায়ে কমিটি প্রয়োজনে, বিলের কোনো ধারার সংশোধনের সুপারিশ করতে পারে । তবে মূলনীতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো সংশোধনীর সুপারিশ করতে পারে না ।

 চতুর্থ পর্যায় :–   এই পর্যায়ে বিলের বিভিন্ন দিক আলোচনার শেষে কমিটি তার রিপোর্ট তৈরি করে । ওই কমিটির চেয়ারম্যানের মাধ্যমে যে কক্ষে বিলটি উত্থাপিত হয়েছিল সেই কক্ষে পাঠানো হয় ।

 পঞ্চম পর্যায় :–   এই পর্যায় হল সভায় বিস্তারিত বিবেচনার পর্যায় । কমিটি প্রদত্ত রিপোর্ট আলোচনার জন্য সভায় গৃহীত হলে বিলটির প্রতিটি ধারা-উপধারা নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা ও তর্কবিতর্ক হয় । সভার যে -কোনো সদস্য 1 দিন আগে সভায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যে-কোনো সংশোধনী প্রস্তাব আনতে পারেন । বিস্তারিত আলোচনার পর বিলটির ধারা - উপধারার ওপর ভোট নেওয়া হয় । এই পর্বে বিলের দ্বিতীয় পাঠ শেষ হয় ।

 ষষ্ঠ পর্যায় :–   বিলের দ্বিতীয় পাঠ শেষ হওয়ার পরে নির্দিষ্ট দিনে বিলের তৃতীয় পাঠ শুরু হয় । এই পর্যায়ে বিলটি সামগ্রিকভাবে গ্রহণ বা বাতিল নিয়ে তর্কবিতর্ক হয় । কোনো আংশিক সংশোধনের সুযোগ থাকে না । সবশেষে বিলটি ভোটাধিক্যে গৃহীত হলে সংশ্লিষ্ট সভার সভাপতি (স্পিকার/চেয়ারম্যান) কে সেই মর্মে সার্টিফিকেট দিতে হয় ।

 সপ্তম পর্যায় :–  সপ্তম পর্যায়ে বিলটি অপর কক্ষে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় । এই কক্ষেও উপরিউক্ত পর্যায়গুলি অতিক্রম করে কোনো প্রকার সংশোধনী ছাড়া বিলটি গৃহীত হলে সপ্তম পর্যায় শেষ হয় । বিলটিকে কেন্দ্র করে উভয় কক্ষের মতবিরোধ হলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহুত যুগ্ম অধিবেশনে ভোটাভুটির মাধ্যমে বিলের ভাগ্য নির্ধারিত হয় ।

 অষ্টম পর্যায় :–  এই চূড়ান্ত পর্যায়ে উভয় কক্ষের অনুমোদন প্রাপ্ত বিলটিকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় । রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতি দিতে পারেন, না ও দিতে পারেন । আবার পুনর্বিবেচনার জন্য বিলটি আইনসভায় ফেরৎ পাঠাতে পারেন । তবে উভয় কক্ষে পুনর্বিবেচনার পর বিলটি পুনরায় রাষ্ট্র পতির কাছে এলে তিনি সম্মতি দিতে বাধ্য থাকেন । রাষ্ট্র পতির সম্মতি পেলে বিলটি আইনে পরিণত হয় ।

    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি অর্থবিল পুনর্বিবেচনার জন্য আইনসভায় ফেরৎ পাঠাতে পারেন না । আইনসভার উভয় কর্তৃক গৃহীত অর্থবিলে সম্মতি প্রদান করতে রাষ্ট্রপতি কক্ষ বাধ্য থাকেন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Thank you. We will try to come up with more questions for you very soon.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)