লোকসভার অধ্যক্ষের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্যাখ্যা করো ।

0

5. লোকসভার অধ্যক্ষের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্যাখ্যা করো ।

Ans.  গ্রেট ব্রিটেনের মতো ভারতীয় সংসদ দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত । সংসদের দুটি কক্ষের মধ্যে নিম্নকক্ষ বা লোকসভা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত । গণতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী এই কক্ষ দেশের শাসনক্ষমতার বাস্তবায়ন করে ।


▪️ নিয়োগ ও কার্যকাল :–  পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার কার্য পরিচালনার জন্য একজন অধ্যক্ষ বা সভাপতি থাকেন । এই সভাপতিকে স্পিকার বলা হয় । লোকসভার নির্বাচনের পর প্রথম অধিবেশনে লোকসভার সদস্যগণ তাদের মধ্য থেকে একজনকে স্পিকার হিসেবে নির্বাচন করেন । লোকসভার মেয়াদ যতদিন থাকে , স্পিকার ততদিন নিজপদে বহাল থাকেন । অবশ্য তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে অথবা তাঁকে পদচ্যুত করা হলে স্পিকারের পদ শূন্য । হতে পারে । স্পিকারকে পদচ্যুত করতে হলে লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যগণ 14 দিনের নোটিশ দিয়ে স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থাপ্রস্তাব উত্থাপন করে ।

▪️ নিরপেক্ষতা :–   লোকসভার অধ্যক্ষ হিসেবে স্পিকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । স্পিকার যাতে নিরপেক্ষভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে । স্পিকার লোকসভার আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে তাঁর বেতন প্রদান করা হয় ।

▪️ ভূমিকা ও কার্যাবলি :–  ভারতীয় সংসদে লোকসভার যাবতীয় কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে স্পিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । তাঁর কার্যাবলিকে কয়েকটি দিক থেকে আলোচনা করা যায় ।

A. প্রশাসনিক ক্ষমতা :  স্পিকার সভার মধ্যে তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন । লোকসভায় অধিবেশন চলাকালীন কোন্ কোন্ বিষয় আলোচিত হবে, কে কে বক্তব্য রাখবেন, বক্তব্যের সময়সীমা কত হবে, কী কী প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে ইত্যাদি বিষয়ে স্পিকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । অবশ্য এসমস্ত বিষয় স্থির করার পূর্বে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেন ।

B. শৃঙ্খলা রক্ষা :  সদস্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও স্পিকারের ওপর ন্যস্ত । সভার মধ্যে কোনো সদস্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে স্পিকার তাকে প্রয়োজনে বহিষ্কার করতে পারেন ।

C. সদস্যদের অধিকার রক্ষা :   লোক সভার সদস্যদের বিশেষ অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব স্পিকারের । কোনো ব্যক্তি লোকসভার সদস্যদের অধিকার লঙ্ঘন করলে তাঁর শাস্তির ব্যবস্থা স্পিকারই গ্রহণ করেন । সভার অবমাননার জন্য কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশও তিনি দিতে পারেন ।

D. অর্থবিল নির্ণয় :   ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কোনো বিল অর্থবিল কি না — এ সম্পর্কে স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে ।

E. কোরাম নির্ণয় :   লোকসভার অধিবেশন নিয়মানুযায়ী চলার জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি অর্থাৎ, গণপূর্তি বা কোরাম প্রয়োজন । স্পিকার সেই কোরাম নির্ণয় করেন । কোরাম না হলে তিনি প্রয়োজনে সাময়িকভাবে সভার কাজ বন্ধ রাখতে পারেন ।

F. ভোটগ্রহণ :   লোকসভার অধিবেশন চলাকালীন কোনো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য স্পিকার ভোট গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন । ভোট গ্রহণের সময় নিরপেক্ষতার কারণে তিনি ভোটদান থেকে বিরত থাকেন ।

G. যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা : স্পিকারের অন্যতম গুরুত্ব-পূর্ণ কার্য হল সংসদের যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা । লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে কোনো কারণবশত অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে, তিনি যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন । লোকসভার বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি কমিটি গঠন করেন । সর্বোপরি রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মধ্যে যোগসূত্রটি স্পিকার বজায় রাখেন ।

▪️ পদমর্যাদা :–  ভারতীয় সংসদে স্পিকারের পদটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । স্পিকারের মর্যাদা সম্পর্কে বলা যায় যে, স্পিকারের অবস্থান হল প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পরেই । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু স্পিকারকে স্বাধীনতার প্রতীক বলে অভিহিত করেন । তাঁর মতে, স্পিকার হলেন জনপ্রিয় কক্ষ এবং জাতীয় মর্যাদার প্রতীক । স্পিকারকে লোকসভার যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করতে হলে সর্বক্ষেত্রেই রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে ।

   প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় নিজ দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছিলেন । পরিশেষে, ভারতে গণতন্ত্রের ঐতিহ্যকে সফল করতে হলে ব্রিটিশ স্পিকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করা উচিত ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Thank you. We will try to come up with more questions for you very soon.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)