গান্ধিজির সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাটি ব্যাখ্যা করো Satyagrah is literally holding on the truth and it means, therefore and is known as, soul force

0

9. গান্ধিজির সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাটি ব্যাখ্যা করো ।


Ans.
 পটভূমি :- ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার আলোচনায় মহাত্মা গান্ধির সত্যাগ্রহ দর্শনের অবদানের গুরুত্ব অপরিসীম । গান্ধিজির কাছে সত্যাগ্রহ তত্ত্ব হল এক সুসংহত জীবনদর্শন । ব্যক্তিকে তিনি সমাজমুখী ও সত্যাগ্রহী করে তোলার পক্ষপাতী ছিলেন । তিনি ব্যক্তির আত্মসুখ ও অহংসর্বস্বতার বিরোধিতা করেছেন ।

     সত্যাগ্রহের মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধি মানুষকে সৎ ও সমাজ সচেতন করে তুলতে চেয়েছেন । টলস্টয়ের অহিংসা ও প্রেমের বাণী, গীতার নিষ্কাম কর্ম, খ্রিস্টের সত্য ও মানবতার আদর্শ, মোহম্মদের সহজ - সরল জীবনদর্শন প্রভৃতি আদর্শ গান্ধিজিকে সত্যাগ্রহের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল ।


মূল অর্থ :-
 সত্যাগ্রহ হল এক সুসংহত জীবনদর্শন এবং সত্যানুসারে সমবেত এক সমবায়িক উদ্যোগ । সত্যাগ্রহ হল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ । কিন্তু এই প্রতিরোধ কোনো বাহ্যিক শক্তি নয়, আত্মিক শক্তি । বাহুবল বা পশু শক্তি নয়, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তিই হল সত্যাগ্রহীর শক্তি । সত্যাগ্রহীর মধ্যে একজন সৈন্যের সকল গুণ বর্তমান থাকবে; কিন্তু হিংসা বা ঘৃণা থাকবে না । সত্যাগ্রহ হল সত্যের জন্য আত্মোৎসর্গ (Self sacrifice for truth) । সত্যাগ্রহ হল এক সংগ্রাম ।

     সত্যাগ্রহের মধ্যে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার বা অরাজকতা সৃষ্টি করার কোনো অভিপ্রায় থাকে না । সত্যাগ্রহের ধারণা ব্যক্ত করতে গান্ধিজি বলেছেন— “Satyagrah is literally holding on the truth and it means, therefore and is known as, soul force.”



সত্যাগ্রহের নীতিসমূহ :- গান্ধিজির সত্যাগ্রহের ধারণাটি গড়ে উঠেছে তিনটি নীতির ওপর ভিত্তি করে । এগুলি হল—

    ১. সত্য : গান্ধিজির সত্যাগ্রহের প্রথম নীতি হল সত্য । তাঁর মতে সত্যই ঈশ্বর । সত্যকে লক্ষ্য হিসেবে স্থির করলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর মাধ্যম হল অহিংসা ।

    ২. অহিংসা : গান্ধিজির সত্যাগ্রহের দ্বিতীয় নীতি হল অহিংসা । সত্যাগ্রহের অনুসরণকারীকে হিংসার পথ থেকে দূরে থাকতে হবে বলে গান্ধিজি মনে করতেন ।

    ৩. আত্মনিগ্রহ :  গান্ধিজি মনে করতেন যে, সত্যাগ্রহী আত্মনিগ্রহের পথ অনুসরণ করলে প্রতিপক্ষের মনে করুণার ভাব জন্ম নেবে এবং এর দ্বারা আত্মনিগ্রহের দাবি পূরণ সম্ভব হবে ।



বৈশিষ্ট্য :
  ১. সত্যাগ্রহ হল এক আত্মিক শক্তি যা সকল রকম অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করে । সত্যাগ্রহীর মধ্যে প্রতিপক্ষের প্রতি হিংসা - দ্বেষ বা বিদ্বেষের মনোভাব থাকে না । কারণ সত্যাগ্রহ তত্ত্বে প্রতিপক্ষের ওপর বলপ্রয়োগের পরিবর্তে প্রতিপক্ষকে পরিবর্তিত করার কথা বলা হয় ।

  ২. সত্যাগ্রহের আদর্শ অনুসরণের জন্য ব্যক্তি মানুষের জীবনধারার আত্মশৃঙ্খলা যেমন দরকার, তেমনি দরকার যাবতীয় দুঃখ - যন্ত্রণা সহ্য করার প্রস্তুতি ও ক্ষমতা ।

  ৩. বিভিন্ন পথে ও পদ্ধতিতে সত্যাগ্রহের আদর্শকে অনুসরণ করা যায় । কিন্তু সত্যাগ্রহের সকল উপায় ও পদ্ধতির মূল ভিত্তি হবে অহিংসার আদর্শ ।

  ৪. সত্যাগ্রহ হল শক্তিমানের অস্ত্র; হীনবলের হাতের হাতিয়ার নয় । সত্যাগ্রহের মধ্যে হিংসা ও ভীরুতার কোনো স্থান নেই ।



 সমালোচনাঃ গান্ধিজির সত্যাগ্রহ তত্ত্বও বিরোধ ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয় । সমালোচকরা সত্যাগ্রহ দর্শনের সীমাবদ্ধতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ।

     প্রথমত,
 সমালোচকদের অভিমত অনুযায়ী সত্যাগ্রহের বিভিন্ন উপায় ও পদ্ধতি বাস্তবে বলপ্রয়োগ হিসেবে প্রতিপন্ন হয় । কারণ সত্যাগ্রহের বিভিন্ন উপায় ও পদ্ধতির মাধ্যমে সত্যাগ্রহী প্রতিপক্ষকে উভয় সংকটের সম্মুখীন করে ।

     দ্বিতীয়ত,
 সমালোচকদের অভিমত অনুসারে সত্যাগ্রহের পন্থা ও পদ্ধতি হল প্রতিপক্ষের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টির এক অভিনব কৌশল বিশেষ ।

     তৃতীয়ত,
গান্ধিজির সত্যাগ্রহ তত্ত্ব অতিমাত্রায় আধ্যাত্মিক বা অধিবিদ্যক প্রকৃতির । স্বভাবতই সত্যাগ্রহ দর্শনের বিভিন্ন ব্যঞ্জনা বা অভিব্যক্তি সকলের কাছে সম্যকভাবে অনুধাবনযোগ্য নয় ।


 মূল্যায়ন :-
উপরোক্ত সমালোচনা সত্ত্বেও বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ, হিংসা, নির্বিচার গণহত্যা ও মারণাস্ত্রের প্রয়োগ থেকে সমগ্র মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে মহাত্মা গান্ধির দর্শন একমাত্র মুক্তির উপায় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Thank you. We will try to come up with more questions for you very soon.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)