ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্যাখ্যা করো ।

0

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্যাখ্যা করো ।


Ans.  গ্রেট ব্রিটেনের অনুকরণে ভারতে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রীর স্থান সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ । গণতান্ত্রিক নীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হলেন দেশের প্রকৃত শাসনকর্তা; আর রাষ্ট্রপতি হলেন নিয়মতান্ত্রিক শাসকমাত্র ভারতীয় সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তৃত উল্লেখ না থাকলেও ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি হলেন সর্বপ্রধান ব্যক্তিত্ব ।


 নিয়োগ :-   সংবিধানের 75 নং ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি । সাধারণভাবে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন । প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নেই । তবে সংসদে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে রাষ্ট্রপতি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন ।



 কার্যকাল :-   ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল 5 বছর । তবে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে অথবা রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভা ভেঙে দিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল তার পূর্বেই সমাপ্ত হয় ।



 প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি :
         ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে কয়েকটি দিক থেকে আলোচনা করা যায় । যেমন —

  (i) সংসদের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী :   ভারতীয় সংসদ তথা আইনসভার নেতা হলেন প্রধানমন্ত্রী । সংসদের নেতা হিসেবে সংসদের অধিবেশন আহ্বান করা, স্থগিত রাখা, লোকসভা ভেঙে দেওয়া, নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়ে থাকেন । সংসদে সরকারের কার্যাবলি ও নীতি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিল সম্পর্কে তিনি ব্যাখ্যা দেন । আবার সংসদে বিতর্কের সময় কোনো মন্ত্রী অসুবিধার সম্মুখীন হলে তাঁকে সাহায্যও করেন । সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নেহরু মন্তব্য করেন – The Prime Minister is the Prime Min ister. He can lay down the policy of govern ment.

  (ii) মন্ত্রীসভা ও ক্যাবিনেটের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী :    প্রধান-মন্ত্রীকে ক্যাবিনেটের প্রধান স্তম্ভ বলা হয় । ক্যাবিনেটের নেতা হিসেবে তিনি মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন । প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেটে সভাপতিত্ব করেন এবং ক্যাবিনেটের আলোচ্য সূচি নির্ধারণ করেন । মন্ত্রীসভা ও ক্যাবিনেটের যাবতীয় ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত । তিনি পদত্যাগ করলে সমগ্র মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয় ।

  (iii) সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী :    লোকসভায় তিনি হলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা । দলের নেতা হিসেবে তাঁর কর্তব্য হল দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করা, সংসদের ভিতরে ও বাইরে দলীয় প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবে রূপ দান করা । প্রধানমন্ত্রীর যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার ওপর দলের ভাবমূর্তি নির্ভরশীল

  (iv) রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী :   প্রধানমন্ত্রী হলেন রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা । সংবিধানের 7৪ নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে আইন ও শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদের যাবতীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অবহিত করেন । ক্যাবিনেটের কোনো সিদ্ধান্ত বা বিল সম্পর্কে । রাষ্ট্রপতি যদি জানতে চান, তাহলে তা সবিস্তারে জানানো প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য ।

  (v) মন্ত্রীসভা ও রাষ্ট্রপতির প্রধান যোগসূত্র :  রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীসভার মধ্যে যোগসূত্র রক্ষা করেন প্রধানমন্ত্রী । প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ ও পদচ্যুত করেন । আবার রাষ্ট্রপতির পরামর্শ ও নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই মন্ত্রীসভা জানতে পারে এবং সেই অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে ।

  (vi) জাতির নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী : জাতির নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ এলাকা থেকে নির্বাচিত হলেও তিনি । কেবল ওই অঞ্চলের প্রতিনিধি নন; দেশের সমগ্র জাতির নেতা তিনি । দেশের সংকট বা জনগণের বিভিন্ন সমস্যায় । তিনি নেতৃত্বদান করেন ।

  (vii) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী :  আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশিষ্ট ভূমিকা আছে । পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন । বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক সম্মেলনে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সন্ধিতে স্বাক্ষর করেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিবিদদের স্বাগত জানান ।


 প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা :–
         সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হলেন ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী । ক্রশম্যান মন্তব্য করেন – Cabinet Government has been transformed into Prime Ministerial Government । ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রীকেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তারার মধ্যে চন্দ্র হিসেবে অভিহিত করা যায় । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধি তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী পদের রাষ্ট্রপতিকরণ ঘটিয়েছিলেন । একক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তিনি মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়োগ করেছিলেন ।

    তবে, বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রবণতাকে সমালোচনা করা হয় । দলীয় গণতন্ত্রের প্রসার, শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতি ইত্যাদি বিষয়গুলি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে । বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী । পদ গ্রহণ করেছেন । তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং জাতির নেতা হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন ।

পরিশেষে উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী কতখানি সাফল্যের সঙ্গে তাঁর কার্য পরিচালনা করবেন তা পুরোপুরি নির্ভর করে তাঁর দক্ষতা, বিচক্ষণতা, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা ও দলীয় সমর্থনের ওপর । সর্বোপরি, সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর পদটি ব্যবহৃত হওয়া উচিত ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Thank you. We will try to come up with more questions for you very soon.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)