অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্যাখ্যা করো ।

0

অঙ্গ-রাজ্যের রাজ্য-পালের ক্ষমতা ও পদ-মর্যাদা ব্যাখ্যা করো ।


Ans.  ভারতীয় সংবিধানের 15 নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে একজন করে রাজ্যপাল আছেন । রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের শাসনবিভাগের সর্বোচ্চ পদাধিকারী । তবে কেন্দ্রের মতো রাজ্যগুলিতেও সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার জন্য তিনি হলেন একজন নিয়মতান্ত্রিক শাসক ।


সংবিধান অনুযায়ী ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি দ্বারা মনোনীত হন । অবশ্য রাষ্ট্রপতি এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করেন । রাজ্যপালের কার্যকালের মেয়াদ 5 বছর । সংবিধানে 156 নং ধারায় বলা হয়েছে – The Governor shall hold office during the pleasure of the President.


  রাজ্যপালের ক্ষমতা :–
    সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের শাসনকার্য তাঁর নামে পরিচালিত হয় । রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন —

 ১. শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা : ভারতীয় সংবিধানের 154 নং ধারায় রাজ্যপালকে অঙ্গরাজ্যের শাসনক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে । রাজ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলিতে তিনি ক্ষমতা ভোগ করেন ।

   (a) প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করে থাকেন । তবে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন ।

   (b) মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তিনি মন্ত্রীপরিষদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন ।

   (c) রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশন -এর সদস্য, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল প্রভৃতি ব্যক্তিদের নিয়োগ ও অপসারণ তিনিই করেন ।

   (d) রাজ্যপালের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন ।

     সংবিধানের 356 নং ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে রাজ্যপাল অচলাবস্থা ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপতি-কে সুপারিশ করতে পারেন ।



 ২. আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা :   ভারতীয় সংবিধানের 168 নং ধারায় রাজ্যপাল হলেন রাজ্য আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ ।

  (a) রাজ্য বিধান পরিষদে তিনি শিল্প, বিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্র থেকে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এবং বিধানসভায় একজন ইঙ্গ-ভারতীয় প্রতিনিধিকে মনোনীত করতে পারেন ।

  (b) রাজ্যপাল আইনসভার অধিবেশন আহ্বান ও স্থগিত রাখতে পারেন এবং প্রয়োজনে ভেঙেও দিতে পারেন । মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্য তিনি এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন ।

  (c) আইনসভার যেকোনো কক্ষে তিনি বাণী প্রেরণ করতে পারেন ।

  (d) রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া কোনো বিল আইনে রূপান্তরিত হয় না । তিনি বিলে সম্মতি দিতে পারেন, আবার নাও দিতে পারেন । এমনকি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরতও পাঠাতে পারেন ।

  (e) রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট রাজ্যে অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন । রাজ্য আইনসভায় অধিবেশন স্থগিত থাকাকালীন এইরূপ অর্ডিন্যান্স অর্থাৎ জরুরি আইন জারি করা হয় ।



 ৩. অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা : অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যপালের ক্ষমতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।

  (a) প্রতিটি আর্থিক বছরের জন্য রাজ্য সরকারের আনুমানিক আয়ব্যয়ের একটি বিবরণ বা বাজেট বিধানসভায় পেশ করতে হয় । রাজ্যপালের সুপারিশ ছাড়া বিধানসভায় কোনো ব্যয়ের দাবি উত্থাপন করা যায় না ।

   (b) রাজ্যপালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হল অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে বিধানসভায় বাজেট উত্থাপন করা ।



  ৪. বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা : রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপালেরও কিছু বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা রয়েছে ।

   (a) রাজ্য হাইকোর্ট -এর বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শ করতে হয় ।

   (b) রাজ্য সরকারের এলাকাধীন বিষয়ে অপরাধের জন্য দণ্ডিত ব্যক্তিকে রাজ্যপাল ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারেন ।




  ৫. স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা অঙ্গরাজ্যের শাসক হিসেবে রাজ্যপাল যে সমস্ত বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করেন, সেগুলিকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বা Discretionary Power বলা হয় । তিনি মন্ত্রীসভার পরামর্শ ছাড়াই স্বাধীনভাবে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন । সংবিধানের 163 নং ধারা অনুযায়ী এই সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি মন্ত্রীপরিষদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন । স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতানুযায়ী রাজ্যপাল উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় উন্নয়ন ও প্রশাসনের বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেন । রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা গুলি হল —

  (i) কোনো রাজ্যপালকে রাষ্ট্রপতি যদি পার্শ্ববর্তী কোনো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শাসনভার তুলে দেন, তাহলে ওই অঞ্চলে রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন ।

  (ii) নাগাল্যান্ডে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাজ্যপালের হাতে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে ।

  (iii) সিকিমের নিরাপত্তার স্বার্থেও জনগণের উন্নয়নের জন্য উক্ত রাজ্যের রাজ্যপালকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে ।

  (iv) অরুণাচল প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে ওই রাজ্যের রাজ্যপালের হাতে কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে । 1986 খ্রিস্টাব্দে 55 তম সংবিধান সংশোধন করে এই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে ।

    এ ছাড়া রাজ্যপালগণ বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাংবিধানিক সংকটের সময় নিজস্ব বিবেচনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন । 356 নং ধারা অনুসারে রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে রাষ্ট্রপতির কাছে নিজস্ব বিবেচনা অনুসারে রাজ্যপাল মতামত পাঠাতে পারেন ।


 রাজ্যপালের শাসনতান্ত্রিক মর্যাদা :
        একশ্রেণির চিন্তাবিদ মনে করেন যে , রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের নামসর্বস্ব শাসক প্রধান । ভারতীয় অঙ্গরাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের মতো সংসদীয় শাসনব্যবস্থা থাকার জন্য প্রকৃত ক্ষমতা মন্ত্রীপরিষদের হাতে ন্যস্ত । এ ছাড়া সংবিধান রাজ্যপালকে সুনির্দিষ্ট স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা দান করেছে । স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের মধ্য দিয়ে রাজ্যপাল রাজ্য মন্ত্রীসভাকে প্রভাবিত করতে পারেন । 1950 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা হাইকোর্টের এক মামলায় মন্তব্য করা হয় যে – The Governor can not act except in accordance with the advice of his minister.


পরিশেষে বলা যায়, ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে রাজ্যপাল হলেন কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম । আবার রাজ্যের শাসকপ্রধান হিসেবে তাঁকে রাজ্যের স্বার্থও সংরক্ষণ করতে হয় । এইভাবে রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় তাঁর দ্বৈত ভূমিকা লক্ষ করা যায় ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Thank you. We will try to come up with more questions for you very soon.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)