দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের ধারণাটি আলোচনা করো ।

I will creat this page became  more templates tryal for preview.
0

2. দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের ধারণাটি আলোচনা করো ।

Ans.  প্রকৃতি, সমাজ এবং বাস্তব ঘটনাবলি অনুসন্ধান ও অনুধাবনের যে বাস্তবসিদ্ধ পদ্ধতি মার্কস ও এঙ্গেলস প্রয়োগ করেছেন, তাকে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বলে । দ্বান্দ্বিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Dialectic' শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ 'Dialego' থেকে, যার অর্থ তর্কবিতর্ক ও আলাপ - আলোচনা । এই তত্ত্বটি মার্কস ও এঙ্গেলস প্রথম ব্যবহার করেননি । এই তত্ত্ব প্রথম ব্যবহারের কৃতিত্ব রুশ সাম্যবাদী জর্জি প্লেখানভের ।

     লেনিনের মতে, দ্বান্দ্বিকতা হল পূর্ণতম, গভীরতম এবং সর্বাঙ্গীণ বিকাশের মতবাদ মানবজ্ঞানের আপেক্ষিকতার মতবাদ । কার্ল মার্কস এই ধারণা গ্রহণ করেছেন হেগেলের দ্বান্দ্বিক মতবাদ থেকে । এই মতবাদের মূল কথা হল – 
     (a) আমাদের চারপাশে যে বস্তুজগৎ রয়েছে, তা কোনো স্বপ্ন, কল্পনা বা অলৌকিক শক্তির দ্বারা সৃষ্টি নয় । এই বস্তুজগতের নিজস্ব অস্তিত্ব আছে , যা মানুষের ইচ্ছা - অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না । সে তার নিজস্ব নিয়মে চালিত হয় । বস্তুজগতের সকল ঘটনা ও বিষয় পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল ।

     (b) মানুষের সমস্ত চিন্তাভাবনা, জ্ঞান, চৈতন্য সবকিছু এই
বস্তুজগৎকে ঘিরে গড়ে ওঠে । মানব চৈতন্যের উৎস হল জগৎ । তাই মানুষের চেতনা বাস্তব জীবনের দ্বারাই পরিচালিত হয় ।

     (c) প্রতিটি বস্তুই গতিশীল এবং পারস্পরিক ঘাতপ্রতিঘাতে বস্তুর গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পায় । তখন তার পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন ঘটে ।

     দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের তিনটি সূত্র আছে । সূত্রগুলি হল –
   (A) পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন (Quantitative change to Qualitative change)

   (B) বৈপরীত্যের ঐক্য ও সংঘাত (Struggle and unity of opposites)

   (C) নেতির নেতিকরণ (Negation of Negation) ।



 (A) পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন (Quantitative change to Qualitative change) :   বস্তুজগতের বিকাশের পরিবর্তনের ধারা সরল ও একটানা নয় । বিকাশের প্রক্রিয়া সরল থেকে শুরু হয়ে ক্রমে জটিল হয় । প্রাথমিকভাবে পরিমাণগত দিক থেকে পরিবর্তন দেখা যায় । দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি অনুসারে এই পরিবর্তনের অর্থ হল উন্নততর ক্ষেত্রে প্রবেশ । এইভাবে বস্তুজগতে পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন ঘটে ।

     যেমন, জ্বলন্ত স্টোভের উপর জলের বাটি ধরলে কিছুক্ষণ পর জল বাষ্প হয়ে উড়ে যায় । সামাজিক ক্ষেত্রেও তাই ঘটে । একে বলে উল্লম্ফন বা লাফ ।


 (B) বৈপরীত্যের ঐক্য ও সংঘাত (Struggle and unity of opposites) :   প্রতিটি বস্তু ও ঘটনার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে । বাদ থাকলেই প্রতিবাদ থাকে । এরপর আসে সম্বাদ, যা পরিবর্তনের ফলশ্রুতি ।


 (C) নেতির নেতিকরণ (Negation of Negation) :  নেতির নেতিকরণ হল বিকাশের প্রক্রিয়া । এটি বৃত্তানুসারী নয়, এটি হল ক্রমানুবর্তী প্রক্রিয়া ; এ প্রক্রিয়ার শেষ নেই । সরল থেকে জটিল, নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তরে এর যাত্রা । বিকাশ ঘটে পুরোনো গুণের বিনাশের ও নতুন গুণের আবির্ভাবের মাধ্যমে । এই নতুন গুণ আবার বিকাশের নিয়মে পরিবর্তিত হয় । একেই বলে নেতির নেতিকরণ । নেতির নেতিকরণ বলতে এমন এক প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার ফলে একটি সমাজব্যবস্থার অস্বীকৃতির মাধ্যমে নতুনতর সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয় ।


  সমালোচনা :   
    প্রথমত,
 সমালোচকদের মতে, মার্কসের আগেও কয়েকজন তাত্ত্বিক এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন । তবে মার্কসই সর্বপ্রথম এই তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছেন ।

   দ্বিতীয়ত,
 সমালোচকদের মতে, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদে যে বস্তুজগতের নিয়মাবলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তার মাধ্যমে জটিল মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় ।

   তৃতীয়ত,
  দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ অনুসারে, মানুষের চিন্তাচেতনা সবই বাস্তব জগৎ নির্ভর । এখানে মানুষের স্বাধীন, মুক্ত ও স্বতঃ স্ফূর্ত চিন্তাভাবনাকে অস্বীকার করা হয়েছে ।

মূল্যায়ন/উপসংহার :  সমালোচনা সত্ত্বেও দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের বিজ্ঞান নির্ভর আলোচনার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না । মানবসমাজের বিকাশের বিজ্ঞান নির্ভর আলোচনার মাধ্যমে অতীত ও বর্তমানকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদে । এর সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ সমাজ কীরূপ হতে পারে, তার আলোচনাও পাওয়া যায় এই তত্ত্বে । এমিল বার্নস -এর মতে, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত মানুষের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানভাণ্ডারের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে । সুতরাং, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের তাত্ত্বিক ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Thank you. We will try to come up with more questions for you very soon.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)