মার্কসবাদের মূলনীতিগুলি ব্যাখ্যা করো ।

I will creat this page became  more templates tryal for preview.
0

1. মার্কসবাদের মূলনীতিগুলি ব্যাখ্যা করো ।

Ans. গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মতবাদগুলির মধ্যে মার্কসবাদ বিশেষ একটি মতবাদ । মার্কসবাদের মূলনীতি তথ্যসূত্রগুলি হল –
A. দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, B. ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, C. শ্রেণি সংগ্রাম এবং D. বিপ্লব । এছাড়া মার্কসবাদে উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্বের দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে প্রাসঙ্গিকতার সঙ্গে ।

 A. দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ :-  প্রকৃতি, সমাজ এবং বাস্তব ঘটনা-বলি অনুসন্ধান ও অনুধাবনের যে বাস্তবসিল পদ্ধতি মার্কস ও এঙ্গেলস প্রয়োগ করেছেন, তাকে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বলে । কার্ল মার্কস এই ধারণা গ্রহণ করেছেন । হেগেলের দ্বান্দুিক মতবাদ থেকে, কিন্তু তিনি এর অতীন্দ্রিয় ভাববাদী অংশটি বর্জন করেছিলেন । এই মতবাদের মূল কথা হল —
         (a) বস্তুজগতের সকল ঘটনা ও বিষয় পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল ।
         (b) মানুষের সমস্ত চিন্তাভাবনা, জ্ঞান, চৈতন্য সবকিছু এই বস্তুজগৎকে ঘিরে গড়ে ওঠে ।
         (c) প্রতিটি বস্তুই গতিশীল এবং পারস্পরিক ঘাতপ্রতিঘাতে বস্তুর গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পায় । তখন তার পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন ঘটে ।
        (d) বস্তুজগতের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক বস্তু ও ঘটনার মধ্যে অন্তর্ধন্দু বজায় থাকে ।

    দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের দু-টি সূত্র আছে । সূত্রগুলি হল –
               (i) পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন ।
               (ii) বৈপরীত্যের ঐক্য ও সংঘাত ।


 B. ঐতিহাসিক বস্তুবাদ :-   মার্কসবাদ একটি বস্তুবাদী দর্শন । এর মূল ভিত্তি হল দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ । মানবসমাজের ইতিহাসের প্রকৃতি আলোচনার ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের প্রয়োগকেই ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বলা হয় ।

     মার্কস বিজ্ঞানসম্মতভাবে মানবসমাজের ইতিহাস ব্যাখ্যা করে বলেন যে, সমাজ সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ যৌথভাবে বসবাস করত এবং সমবেত উদ্যোগে জীবনযাত্রা নির্বাহের প্রয়োজনে দ্রব্য উৎপাদন করতো ।

   মার্কসীয় মতবাদ অনুসারে উৎপাদন পদ্ধতিই হল মানবসমাজের বিকাশের কারণ । [উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তনের ফলেই মানবসমাজের বিকাশ ও পরিবর্তন ঘটে । ]


 C. শ্রেণি সংগ্রাম :-     শ্রেণিসংগ্রাম সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উৎপত্তির সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণির উৎপত্তি হয়েছে । সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির স্বার্থ পরস্পরের থেকে পৃথক শুধু নয়, পরস্পর বিরোধী । পরস্পর বিরোধী স্বার্থের কারণেই পরস্পরের মধ্যে সংগ্রাম অনিবার্য ।

    শোষক ও শোষিতদের মধ্যে সংগ্রাম কখনও শান্তিপূর্ণ, কখনও অশান্ত, কখনও রক্তপাতহীন, কখনও রক্তাক্ত হয়ে থাকে । মার্কস ও এঙ্গেলস শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রামকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন । শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রাম পরিচালিত হয় তিনটি দিক থেকে –
      (i) অর্থনৈতিক সংগ্রাম,
      (ii) রাজনৈতিক সংগ্রাম ও
      (iii) মতাদর্শগত সংগ্রাম ।



D. বিপ্লব :-    মার্কসবাদ অনুসারে বিপ্লবের মাধ্যমে পুরানো সামাজিক অবস্থার পরিবর্তে নতুন এক প্রগতিশীল সমাজব্যবস্থা গঠনের কথা বলা হয় । মার্কসবাদে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা ও শ্রেণি সম্পর্কের সাথে সাথে প্রথাগত ধারণা ও বিশ্বাসেরও পরিবর্তন ঘটে বলে মনে করা হয় । এই তত্ত্ব অনুযায়ী পুরোনো উৎপাদন সম্পর্কের সঙ্গে নতুন উৎপাদিকা শক্তির বিরোধই বিপ্লবের কারণ বলে মনে করা হয় ।

   লেনিন বিপ্লবের জন্য ‘বস্তুগত অবস্থা’ ও ‘বিষয়ীগত অবস্থা’ নামক দুটি শর্তের উল্লেখ করেছেন । এছাড়া মার্কসবাদে ‘হিংসা ও বিপ্লব’ এবং ‘বিপ্লব ও গণতন্ত্রের নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গী’ তুলে ধরা হয়েছে ।


মূল্যায়ন :-    একথা ঠিক যে মার্কসীয় তত্ত্বে বিপ্লবকে পার্থক্য ব্যতিরেকে সামাজিক ও রাজনৈতক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখানো হয়েছে । আবার বস্তুবাদী ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদানকে অবহেলার দিকটি ফুটে ওঠে ইতিহাসের অগ্রগতির প্রযুক্তিবিদ্যার দিকটি অবহেলিত হয়েছে এই তত্ত্বে ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Thank you. We will try to come up with more questions for you very soon.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)