ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ধারণাটি আলোচনা করো ।

I will creat this page became  more templates tryal for preview.
0

3. ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ধারণাটি আলোচনা করো ।

Ans. মার্কসবাদ একটি বস্তুবাদী দর্শন । এর মূল ভিত্তি হল দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ । মানবসমাজের ইতিহাসের প্রকৃতি আলোচনার ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের প্রয়োগকেই ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বলা হয় । প্রকৃতপক্ষে মানবসমাজের উদ্ভব, বিকাশ ও বিবর্তনের ইতিহাস ব্যাখ্যা করে ঐতিহাসিক বস্তুবাদ । মার্কস রচিত ‘ইকনমিক্‌ অ্যান্ড ফিলোজফিক্যাল ম্যানুস্ক্রিপ্টস্’, মার্কস ও এঙ্গেলস রচিত ‘দি হোলি ফ্যামিলি’, ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’, ‘দি জার্মান আইডিওলজি’ প্রভৃতি গ্রন্থে ঐতিহাসিক বস্তুবাদের আলোচনা পাওয়া যায় ।

   এই প্রসঙ্গে মরিস কর্নফোর্থ তিনটি মূলসূত্রের অবতারণা করেছেন । এগুলি হল –
  (i)  সমাজের বিকাশ ও পরিবর্তন প্রকৃতির মতোই সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে পরিচালিত হয় ।

  (ii)  সমাজের বৈষয়িক জীবনযাত্রার বিকাশের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে রাজনৈতিক তত্ত্ব, ভাবাদর্শ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রভৃতি উপাদানসমূহ ।

  (iii)  বৈষয়িক জীবনযাত্রার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা উপাদান সমূহ বাস্তবে যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে । কার্ল মার্কসই সর্বপ্রথম বিজ্ঞানসম্মতভাবে মানবসমাজের ইতিহাস ব্যাখ্যা করে বলেন যে, সমাজ সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ যৌথভাবে বসবাস করত এবং সমবেত উদ্যোগে জীবনযাত্রা নির্বাহের প্রয়োজনে দ্রব্য উৎপাদন করত । উৎপাদন পদ্ধতির দুটি ধারা আছে । যথা – (A) উৎপাদন শক্তি ও (B) উৎপাদন সম্পর্ক


  (A) উৎপাদন শক্তি :-  উৎপাদন শক্তি বলতে বোঝায় প্রাকৃতিক সম্পদ, উৎপাদন যন্ত্র, শ্রম, দক্ষতা, প্রযুক্তি প্রভৃতির সমন্বয় । অর্থাৎ, উৎপাদন শক্তি মানে শ্রম ও উৎপাদনের উপকরণ ।


 (B) উৎপাদন সম্পর্ক :-   উৎপাদন সম্পর্ক বলতে বোঝায় উৎপাদন যন্ত্র এবং তার সঙ্গে যুক্ত মানুষের সম্পর্ক এবং উৎপাদনে যুক্ত মানুষের পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক ।


❇️সামাজিক বিকাশের ইতিহাস :-  ঐতিহাসিক বস্তুবাদের তত্ত্ব অনুসারে মানবসমাজের বিকাশের ইতিহাসকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা যায় । এগুলি হল –

   (a) আদিম সাম্যবাদী সমাজ :-   আদিম সভ্যতার প্রাথমিক পর্বে মানুষ যৌথভাবে বসবাস করত । সমবেতভাবে যে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদিত হত তার ওপর সব মানুষের সমান অধিকার ছিল । এই সমাজে কোনো শ্রেণি ছিল না, রাষ্ট্রও ছিল না ফলে শ্রেণিশোষণ ও শ্রেণিদ্বন্দ্বও ছিল না । এই সমাজকে বলা হয় আদিম সাম্যবাদী সমাজ ।

  (b) দাস সমাজ :-   শ্রেণিশোষণ ও শ্রেণিসংগ্রামের প্রথম সূচনা হয় দাস সমাজে । এই সমাজ ছিল ক্রীতদাস ও দাস - মালিক এই দুই সমাজে বিভক্ত । দাস - মালিক ভয়ংকর শোষণ ও অত্যাচার করত ক্রীতদাসদের ওপর । ক্রমে দাস - মালিক ও ক্রীতদাসদের মধ্যে শুরু হল শ্রেণিখন্দু । ফলে দাস সমাজের পতন ঘটে সামন্ত সমাজের সূচনা হয় ।

   (c) সামন্ত সমাজ :-   ইতিহাসের ধারাবাহিক ক্রমবিকাশের ফলে দাস সমাজের পরে আসে সামস্ত সমাজ । সামপ্ত সমাজ ছিল দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত – ভূস্বামী এবং ভূমিদাস । সমাজের প্রাধান্যকারী শ্রেণি ভূস্বামীরা ভূমিদাসদের ওপর শোষণ ও অত্যাচার চালালে দুটি শ্রেণির মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় । এর ফলে পুঁজিবাদী সমাজের উদ্ভব হয় ।

   (d) পুঁজিবাদী সমাজ :-   আগের সমাজগুলির থেকে অনেক উন্নত, আধুনিক ও সভ্য সমাজ হল পুঁজিবাদী সমাজ । পুঁজিবাদী সমাজের দুটি প্রধান শ্রেণি হল কলকারখানার ও পুঁজির মালিক পুঁজিপতি শ্রেণি; অপরদিকে ছিল শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত শ্রমিক শ্রেণি বা সর্বহারা শ্রেণি । এই সমাজে মানুষ অত্যন্ত রাজনীতি ও শ্রেণিসচেতন হয়ে ওঠে । রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের ফলে গঠিত হল সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা


❇️সমালোচনা :–   সমালোচকদের মতে, মানবসমাজের ইতিহাস বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মার্কস অর্থনৈতিক দিকটির ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন । কিন্তু অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়াও ধৰ্ম, দর্শন, মতাদর্শ ইত্যাদিও মানবসমাজের বিকাশের ধারাকে প্রভাবিত করে ।

     প্রথমত,
 শ্রেণিদ্বন্দ্ব ও শ্রেণিসংগ্রামের কারণে মানবসমাজের পরিবর্তন ঘটে বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । কিন্তু সমাজ ব্যবস্থায় শ্রেণিদ্বন্দ্ব ও শ্রেণি্সংগ্রামের পাশাপাশি শ্রেণি সংহতি ও শ্রেণি সহযোগিতাও পরিলক্ষিত হয় ।

    দ্বিতীয়ত,
 সমালোচকগণ মানবসমাজের বিকাশের ইতিহাসকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করেন না । এই তত্ত্ব মানবসমাজের বিকাশের ইতিহাসকে নিরপেক্ষভাবে ব্যাখ্যা - বিশ্লেষণ করেনি । কোনো একটি বিশেষ শ্রেণির সমর্থনে মানবসমাজের বিকাশের ইতিহাসের ধারাকে বিচার - বিবেচনা করা হয়েছে ।

    তৃতীয়ত,
 উপরোক্ত সমালোচনা সত্ত্বেও ঐতিহাসিক বস্তুবাদের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না ধর্ম, দর্শন, মতাদর্শ মানবসমাজের বিকাশের ধারাকে প্রভাবিত করতে পারলেও অর্থনৈতিক শক্তি সবথেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করে । বাস্তবে আমরা দেখি যে, যে শ্রেণির হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা বেশি থাকে, সেই শ্রেণিই সমাজের নিয়ন্তা শক্তি হিসেবে প্রভাব বিস্তার করে । সুতরাং মার্কসবাদের ঐতিহাসিক বস্তুবাদের প্রাসঙ্গিকতা অনস্বীকার্য ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Thank you. We will try to come up with more questions for you very soon.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)