মার্কসবাদের শ্রেণি ও শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করো ।

I will creat this page became  more templates tryal for preview.
0

4. মার্কসবাদের শ্রেণি ও শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করো ।

Ans. মাকস ও এঙ্গেলস তাঁদের ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ -র আলোচনা মানবসমাজ সম্পর্কে একটি সাধারণ বাক্য দিয়ে শুরু করেছেন – আজ পর্যন্ত যেসব সমাজ দেখা গেছে তা সবই শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কিত । কিন্তু মার্কস ও এঙ্গেলস কোথাও নির্দিষ্টভাবে শ্রেণির সংজ্ঞা দেননি । মার্কস তাঁর ‘দাস ক্যাপিটাল’ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডের শেষ অধ্যায়ে শ্রেণির সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি ।

   লেনিন তাঁর ‘এ গ্রেট বিগিনিং’ নামক প্রবন্ধে শ্রেণি সম্পর্কে সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছেন – শ্রেণি হল ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারিত সামাজিক উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণকে কেন্দ্র করে । গড়ে ওঠা সম্পর্কের ভিত্তিতে গঠিত গোষ্ঠী । তিনি শ্রেণির চারটি বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করেছেন –

   (a) ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারিত উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রেণির গোষ্ঠীগত অবস্থান ;
   (b) উৎপাদনের উপকরণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ;
   (c) সামাজিক শ্রম সংগঠনে তাদের ভূমিকা ও সামাজিক সম্পদের সেই অংশের বণ্টন ও নিয়ন্ত্রণে তাদের ভূমিকা ।


 শ্রেণির স্বরূপ :  শ্রেণিকে বুঝতে হলে শুধু তার আয় ও শ্রেণিগত মর্যাদা, বৌদ্ধিক ক্ষমতা দিয়ে বুঝলে হবে না । শ্রেণি হল একটি বড়ো অর্থনৈতিক গোষ্ঠী । সেদিক থেকে এর একটি বস্তুগত বা বিষয়গত চরিত্র আছে, যাকে মার্কস শ্রেণির শ্রেণি ( class in itself ) বলে অভিহিত করেছেন । এ অবস্থা বস্তুগতভাবে অস্তিত্বশীল হলেও নিজেদের সম্বন্ধে তারা সচেতন নয় ।

 শ্রেণির উৎপত্তি সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উৎপত্তির সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণির উৎপত্তি হয়েছে । এটিই শ্রেণির উৎপত্তির অর্থনৈতিক কারণ । কিন্তু শ্রেণি চিরকালীন নয় ইতিহাস - নির্দিষ্ট কোনো এক পর্বে শ্রেণি ছিল না । ব্যক্তিগত সম্পত্তির উৎপত্তির সঙ্গে সঙ্গে যেমন শ্রেণির উৎপত্তি হয়েছে, তেমনি ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসানের সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণিরও অবসান ঘটবে ।

 শ্রেণিসংগ্রাম :  সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির স্বার্থ পরস্পরের থেকে পৃথক শুধু নয়, পরস্পর বিরোধী । পরস্পর বিরোধী স্বার্থের কারণেই পরস্পরের মধ্যে সংগ্রাম অনিবার্য । প্রাচীন যুগে ক্রীতদাস ও মালিকদের স্বার্থ এক ছিল না, তাই চলেছিল বিরোধ ও সংগ্রাম । সামন্ততান্ত্রিক যুগেও চলেছে ভূমিদাসদের সঙ্গে সামন্ত প্রভুদের সংগ্রাম ।

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে মার্কস ও এঙ্গেলস লিখেছেন – আগেকার সব সমাজের হাসই হল শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস, এই সংঘর্ষ শোষক ও শোষিত শ্রেণির মধ্যে, সমাজ বিবর্তনের বিভিন্ন স্তরে শাসক ও শাসিত শ্রেণির মধ্যে । মার্কসবাদ অনুসারে ব্যক্তিগত সম্পত্তি, যা শ্রেণিসংগ্রামের ভিত্তি তা দূর না হলে শ্রেণিসংগ্রামও দূর হবে না । 

শ্রেণিসংগ্রাম ও মানবসমাজ :  ফরাসি বিপ্লব এবং শিল্পবিপ্লবের পর একদিকে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশ হয়েছে, অপরদিকে আধুনিক প্রোলেতারিয়েত শ্রেণি বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সংগ্রাম করেছে । মার্কস ও এঙ্গেলস শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রামকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন । শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রাম পরিচালিত হয় তিনটি দিক থেকে – (A) অর্থনৈতিক সংগ্রাম, (B) রাজনৈতিক সংগ্রাম ও (C) মতাদর্শগত সংগ্রাম


 (A) অর্থনৈতিক সংগ্রাম বেতনবৃদ্ধি বা নানা ধরনের অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধার জন্য সংগ্রামকে অর্থনৈতিক সংগ্রাম বলা হয় । এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিকশ্রেণি ঐক্যবদ্ধ হয় ঠিকই কিন্তু, এই সংগ্রাম শুধুমাত্র ট্রেড ইউনিয়ন চেতনা বা শ্রমিকসংঘের চেতনা বৃদ্ধি করে, তার বেশি নয় । এই সংগ্রামের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে শ্রমিকশ্রেণি তার যে মৌলিক দায়িত্ব, পুঁজিবাদ ধ্বংস করার কাজে অংশগ্রহণ করবে না ।

 (B) রাজনৈতিক সংগ্রাম :   এই সংগ্রাম হল সর্বশ্রেষ্ঠ সংগ্রাম, কারণ এই সংগ্রামের মাধ্যমেই শ্রমিকশ্রেণি বিপ্লব করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে দখল করে এবং নিজেকে শাসকশ্রেণিতে উন্নীত করে । রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে না পারলে শ্রমিকশ্রেণি তার নিজস্ব চিন্তাধারা ও নিজস্ব শ্রেণিশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না ।


 (C) মতাদর্শগত সংগ্রাম :   ধনতান্ত্রিক সমাজের তাত্ত্বিকদের দ্বারা উত্থাপিত নানা তত্ত্বের সমালোচনা করা শ্রমিকশ্রেণির অন্যতম কর্তব্য । কারণ, ধনতান্ত্রিক মতাদর্শের বিরোধিতা সঠিকভাবে করতে না পারলে ধনতান্ত্রিক সমাজের অবসান করা যায় না । মার্কস লিখেছেন – ধনতান্ত্রিক দুর্গে আমরা আঘাত করতে পারব না যদি না আমরা বৌদ্ধিকভাবে জয়লাভ করতে পারি ।


সমালোচনা :  
      প্রথমত,
 সমাজজীবনে দ্বন্দ্বের নানা উৎস আছে, শ্রেণিদ্বন্দ্ব তার মধ্যে একটি ।

     দ্বিতীয়ত,
 শ্রমিকশ্রেণির যে ভূমিকার কথা মার্কস ও এঙ্গেলস বলেছেন তা সঠিক নয়; কমিউনিস্ট পার্টিতে মধ্যবিত্তদের আধিপত্যই বেশি ।

     তৃতীয়ত,
 শ্রমিকশ্রেণির মধ্যেও ঐক্য লক্ষ করা যায় না, কারণ শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে নানাধরনের পার্থক্য আছে । দক্ষ - অদক্ষ, পুরুষ - মহিলা, স্থায়ী - অস্থায়ী ইত্যাদি নানা পার্থক্য থাকার কারণে তাদের মধ্যে ঐক্য নেই ।

     চতুর্থত,
 সমাজ পরিবর্তনের কারণ শ্রেণিসংগ্রাম নয় । এর কারণ হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Thank you. We will try to come up with more questions for you very soon.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)