রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বর্ণনা করো ।

0

রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বর্ণনা করো ।

Ans. ভারতীয় সংবিধানের 153 নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে একজন করে রাজ্যপাল আছেন । রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের শাসনবিভাগের সর্বোচ্চ পদাধিকারী । রাজ্যের শাসনকার্য রাজ্যপালের নামে পরিচালিত হয় । ভারতীয় সংবিধানে রাজ্যপালকে শাসন, আইন, অর্থ, বিচার বিষয়ক ক্ষমতার সঙ্গে কিছু স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাও প্রদান করা হয়েছে ।

 ভারতীয় সংবিধানে 163 নং ধারায় রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার উল্লেখ আছে । সংবিধান অনুযায়ী এইসমস্ত ক্ষমতার প্রয়োগের ব্যাপারে রাজ্যপাল মন্ত্রীপরিষদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করবেন না । রাজ্যপালের এই স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাগুলি হল — 

  ◾ কোনো রাজ্যপালকে রাষ্ট্রপতি যদি পার্শ্ববর্তী কোনো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শাসনভার তুলে দেন, তাহলে ওই অঞ্চলে রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন ।

  ◾ নাগাল্যান্ডে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাজ্যপালের হাতে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে ।

  ◾  সিকিমের নিরাপত্তার স্বার্থে ও জনগণের উন্নয়নের জন্য উক্ত রাজ্যের রাজ্যপালকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে ।

  ◾ অরুণাচল প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে ওই রাজ্যের রাজ্যপালের হাতে কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে । 1986 খ্রিস্টাব্দে 55 তম সংবিধান সংশোধন করে এই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে ।

        এ ছাড়া রাজ্যপালগণ বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাংবিধানিক সংকটের সময় নিজস্ব বিবেচনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন । 356 নং ধারা প্রয়োগের জন্য পরিস্থিতি বিবেচনা করা । এই ধারা অনুসারে রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে রাষ্ট্রপতির কাছে নিজস্ব বিবেচনা অনুসারে রাজ্যপাল মতামত পাঠাতে পারেন । তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নিশ্চিত হলে উক্ত রাজ্যে সরকার ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করতে পারেন ।

    তা ছাড়া নির্বাচনে কোনো দল বা ফ্রন্ট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে বা শাসকদলে বা ফ্রন্টে দলত্যাগজনিত কারণে সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়লে রাজ্যপাল স্ববিবেচনা অনুসারে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন । এই পরিস্থিতিতে কাউকে মন্ত্রীসভা গঠনের সুযোগ দিতে পারেন, আবার নাও দিতে পারেন ।

বস্তুতপক্ষে, রাজ্যপালের এই স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার এক্তিয়ার এতই ব্যাপক যে, যখনতখন রাজ্য সরকারগুলিকে উৎখাত করা হয়ে থাকে । কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে রাজ্যপালকে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন ।

1967 ও 1982 খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে রাজস্থান এবং হরিয়ানায় অনুরূপ পরিস্থিতিতে কংগ্রেস দলকে সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া — এসব ঘটনা থেকে প্রমাণ হয় রাজ্যপালগণ নিয়মতান্ত্রিক ভূমিকা পালনের থেকে কেন্দ্রের এজেন্ট হয়ে ভূমিকা পালনে বেশি তৎপর ।

 উপসংহারঃ– কাটজু -র মতে, রাজ্যের প্রতিদিনের রাজনীতিতে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় । বরং তাঁর কর্তব্য হওয়া উচিত নিজের অভিজ্ঞতার দ্বারা মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সহকর্মীদের উন্নততর প্রশাসন পরিচালনার কার্যে সহায়তা করা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Thank you. We will try to come up with more questions for you very soon.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)